ঝুমকি বসু
ষষ্টি থেকে দশমী এই পাঁচ দিন দুর্গাপূজোয় চলে নানা আনুষ্ঠানিকতা। অঞ্জলি দেওয়া, ঠাকুর দেখার সঙ্গে সঙ্গে কিছু খাবার যেন না-খেলে পুজো পুজোই মনে হয় না। এছাড়া পুজোর সময় বাড়ি ভর্তি থাকে আত্মীয়-স্বজন। তাদের আপ্যায়ন করা হয় এই খাবারগুলো দিয়েই। বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই আটটি খাবার। চলুন আজ সেই রেসিপিগুলোই দেখে নিই, যেগুলো পুজোর সময় প্রত্যেক ঘরে ঘরেই তৈরি হয়ে থাকে।
১। লুচি

উপকরণ : ময়দা ২ কাপ, নুন ১ চিমটি, তেল ২ কাপ, জল প্রয়োজনমতো।
প্রণালি : একটি বড় পাত্রে ময়দা নিয়ে তাতে নুন এবং ১ টেবিল চামচ তেল দিয়ে ভালো করে মেশান। অল্প অল্প করে জল দিয়ে ময়দাটা মাখুন। বেশি শক্ত বা বেশি নরম যেন না হয়। ছোট ছোট গোল গোল লুচির আকৃতিতে বেলে নিন। একটা কড়াইয়ে তেল গরম করে লুচিগুলো সোনালি করে ভেজে তুলে গরম গরম পরিবেশন করুন।
২। সবজি

উপকরণ : পেঁপে ১টা, গাজর ১টা, মিষ্টি কুমড়ো ১ ফালি, চিচিঙ্গা ১টা, আলু বড় ১টা, পাঁচফোড়ন ১ চিমটি, তেজপাতা ২টো, শুকনা লঙ্কা ২টো, কাঁচালঙ্কা ৫-৬টা, হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, তেল ২ টেবিল চামচ, নুন স্বাদমতো, চিনি সামান্য।
প্রণালি : সব তরকারি পাতলা পাতলা করে কেটে ধুয়ে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে শুকনা লঙ্কা ফোঁড়ন দেবেন। এরপর একে একে পাঁচফোড়ন, তেজপাতা দিয়ে দিন। তরকারিগুলো দিয়ে দিন। হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে রেখে মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ পর নুন, কাঁচালঙ্কা, সামান্য জল দিয়ে ঢেকে দিন। জল শুকিয়ে গেলে সামান্য চিনি দিয়ে মৃদু আঁচে খানিকক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে ফেলুন।
৩। ছোলার ডাল

উপকরণ : ছোলার ডাল ২০০ গ্রাম, কাজুবাদাম ১ চা চামচ, কিশমিশ ১ চা চামচ, নারকোলের দুধ ১ কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২টা, টমেটো ১টা, জিরেবাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, শুকনা লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, গোটা শুকনা লঙ্কা ২টি, তেল ২ টেবিল চামচ, গরম মশলা বাটা ১ চা চামচ, নুন স্বাদমতো।
প্রণালি : ছোলার ডাল সিদ্ধ করে রাখুন। কড়াইয়ে তেল গরম হলে শুকনা লঙ্কা ও তেজপাতা ফোঁড়ন দিন। হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন, আদা ও জিরেবাটা দিয়ে কষান। ডাল দিয়ে দিন। ফুটে উঠলে নারকোলের দুধ মেশান। ঘন হলে ঘি, কাজুবাদাম, কিশমিশ ও গরম মশলা বাটা দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
৪। খিচুড়ি

উপকরণ : আতপ চাল ৩ কাপ(পোলাও যে চাল দিয়ে করা হয়), মুগ ডাল ১ কাপ, গোটা গরম মশলা কয়েকটা, তেজপাতা ৪-৫ টা, শুকনা লঙ্কা ৩ টা, কাঁচালঙ্কা ৫-৬ টা, আদা থেঁতো করা ১ টেবিল চামচ, পাঁচফোড়ন এক চিমটি, তেল ১ কাপ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, গরম জল ৮ কাপ, নুন স্বাদমতো, চিনি সামান্য।
প্রণালি : মুগডাল শুকনো কড়াইয়ে সোনালি করে ভেজে নিন। ঠান্ডা হলে ডালটা ধুয়ে রাখুন। হাড়িতে তেল দিন। তেল গরম হলে শুকনা লঙ্কা ফোঁড়ন দিন। লঙ্কার রঙ কালচে হলে পাঁচফোড়ন, তেজপাতা, গরম মশলা, ছেঁচা আদা দিন। একটু ভেজে চাল দেবেন। চাল ভাজা হলে ডাল মিশিয়ে হলুদ দিয়ে নাড়বেন। এরপর গরম জলটা দিয়ে দিন। কাঁচালঙ্কা ও নুন দিয়ে ঢেকে রাখুন। ফুটে উঠলে গ্যাসের আঁচ কমিয়ে দেবেন। চিনি দিয়ে কিছুক্ষণ মৃদু আঁচে ঢেকে রাখবেন। ঝরঝরে হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
৫। পায়েস

উপকরণ : দুধ ২ লিটার, আতপ চাল ১ কাপ, মিশ্রি ১/২ কেজি, নুন সামান্য, কিশমিশ ১ টেবিল চামচ, কাজু বাদাম ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি : হাড়িতে দুধ এবং চাল দিয়ে জ্বাল দিন। সামান্য নুন মেশান। চাল সেদ্ধ হলে মিশ্রি দিয়ে নাড়তে থাকুন। বারবার নাড়বেন নয়তো তলায় লেগে যাবে। ঘন হলে নামিয়ে কিশমিশ ও কাজুবাদাম ছড়িয়ে দিন। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
৬। পোলাও

উপকরণ : পোলাওয়ের চাল ৪ কাপ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ টেবিল চামচ, তেজপাতা ৩-৪ টা, এলাচদানা ৩-৪ টা, লবঙ্গ ৩-৪টা, দারচিনি ৩-৪ টুকরো, কাঁচালঙ্কা ৭-৮ টা, তেল ১ কাপ, জল পৌনে ৮ কাপ, নুন প্রয়োজনমতো, চিনি সামান্য।
প্রণালি : প্রথমে হাড়িতে তেল দিয়ে তেজপাতা, গরম মশলা ফোঁড়ন দিন। এরপর পেঁয়াজকুচি দিয়ে সোনালি করে ভাজুন। পেঁয়াজ, আদা বাটা দিয়ে নাড়ুন। চাল দিয়ে ভালোভাবে ভাজুন। ভাজা হলে আগে থেকেই গরম করে রাখা পৌনে ৮ কাপ জল দিন। নুন ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে ঢেকে রাখুন। ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন। চিনি মেশান। কিছুক্ষণ দমে রাখুন।
৭। খাসির মাংস

উপকরণ : খাসির মাংস ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, টক দই ১/২ কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ চা চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ টেবিল চামচ, কাজুবাদামবাটা ২ চা চামচ, গরম মশলা ১ চা চামচ, শুকনা মরিচগুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদগুঁড়ো ১ চা চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, সয়াসস ২ চা চামচ, চিনি সামান্য, তেল আধা কাপ, নুন স্বাদমতো।
প্রণালি : মাংসে সয়াসস মাখিয়ে ২ ঘণ্টা ম্যারিনেট করুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি সোনালি করে ভাজুন। সব মশলা ও দই দিয়ে কষান। এবার মাংস দিয়ে ভালো করে কষাতে থাকুন। কষানো হলে অল্প জল দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে রান্না করুন। সেদ্ধ হয়ে ঝোল ঘন হলে ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
৮। নারকোলের নাড়ু

উপকরণ : নারকোল বড় ২ টো, গুড় ৫০০ গ্রাম
প্রণালি : নারকোল কুরিয়ে নিয়ে গুড়সহ কড়াইয়ে দিন। অনবরত নাড়তে থাকুন। আঠার মতো হয়ে এলে অল্প একটু নামিয়ে নাড়ু বানিয়ে দেখুন। যদি ভালোভাবে নাড়ু তৈরি হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন পাক ঠিক আছে। তখন নামিয়ে নিয়ে গরম থাকতে থাকতেই বাকি নাড়ুগুলো বানিয়ে ফেলুন।