রমা রায় হালদার
বাঙালী র দুর্গা পূজো মানেই,দেদার মজা,আর পেট পুরে খাওয়া দাওয়া। নো ডায়েট।এ কদিন কোলেস্টোরল,ওজন নিয়ে ভাবনা দূরে থাকে।পূজো তো মিলনের উৎসব।সারাবছর সবাই যে যার মত কাজে ব্যস্ত থাকে ,কিন্তু এ ক দিন সবাই একজায়গায় হয়।খাওয়া দাওয়া আনন্দ সব মিলে জমজমাট।সপ্তমী থেকে দশমী র উৎসবে,বনেদি বাড়ির বিভিন্ন পদ,বাড়িতে বসেই দারুন সব রান্নার রেসিপি রইলো আপনাদের জন্য।সঙ্গে মা ঠাকুমার হাতের বানানো বিজয়ার নানা রকমের নাড়ু আর মিষ্টি।
সপ্তমি তে সাবেকি রান্না মটরশুঁটির পোলাও অথবা তাহিরি।
কি কি চাই।
মটরশুঁটি সেদ্ধ করা 2 কাপ।গোবিন্দভোগ চাল 2 কাপ।তেজপাতা 2 টি।থেঁতো করা গরমমশলা 1 চামচ।কালোজিরা 1 চা চামচ।পেঁয়াজকুচি 2 চামচ।নুন ও জল স্বাদ মত।সাদা তেল 1/2 কাপ।গোলমরিচ কয়েকটি।
রান্না
০চাল জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
০তেল গরম করে পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে।খুব লাল না করে।
০এর মধ্যে তেজপাতা, গরম মশলা, গোলমরিচ ও কালোজিরা দিয়ে নেড়েচেড়ে সেদ্ধ মটর শুঁটি দিতে হবে।
০জল ঝরানো চাল এর মধ্যে দিয়ে দিতে হবে।
০এর মধ্যে আন্দাজ মত নুন ও চাল এর দ্বিগুন জল দিতে হবে।পারলে এক কাপ দুধ দেয়া যেতে পারে।
০সেদ্ধ হলে ঝরঝর ভাত নামিয়ে পরিবেশন করুন।
অষ্টমীর ফুলকো লুচি ,ছোলার ডাল আর সাথে
ফুলকপির দো পেঁয়াজা।যারা পেঁয়াজ দিতে চান না,তারা পেঁয়াজ বাদ দিয়েই করতে পারেন।
কি কি চাই
ফুলকপি 1 টা।পেঁয়াজ 2 টো কুচানো। টম্যাটো 2 টি কুচানো। খোঁয়াক্ষীর গুঁড়ো করা।2 চামচ দুধ। 1 কাপ টকদই। ধনে গুঁড়ো 1 চামচ। 1 চামচ গোটা জিরে। আদা ও রসুন ছোট টুকরো ও আজ কোয়া। তেজপাতা। সাদা তেল প্রয়োজন মত।
রান্না
০তেল গরম করে ফুলকপি ভেজে নিন।
০ওই তেলেই তেজপাতা ও গোটা জিরে ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ ভেজে নিন।
০এর মধ্যে টম্যাটো,নুন,হলুদ,ধনে ও লঙ্কা গুঁড়ো,রসুন আদা বাটা দিন।
০দই মিশিয়ে কষিয়ে নিন।
০মশলা কষে এলে তাতে ফুলকপি দিন।
০তারপর খোয়া ক্ষীর দুধে গুলে দিয়ে দিন।
০নামিয়ে ওপর থেকে ধনে পাতা কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।
অষ্টমীর লুচির সাথে মিষ্টি হিসেবে মোহনপুরি জমিয়ে দেবে।
মোহনপুরি
কি কি লাগবে
ঘি এর ময়ান দেয়া মাখা ময়দা।শুকনো খোয়া ক্ষীর কাজু কিসমিস মেশানো। ভাজবার জন্য ঘি। ঘন চিনির রস।
রান্না
০ময়দা লেচি করে কেটে লুচির আকারে গড়ে নিন।
০একটি লুচির উপরে খোয়াক্ষীর এর পুর দিয়ে আর একটি লুচি দিয়ে মুড়ে দিতে হবে।
০ কড়াই তে ঘি গরম করে লুচি ভাজতে হবে।
০তারপর লুচি চিনির রসে ফেলতে হবে।কিছুক্ষণ ভেজার পর উঠিয়ে নিতে হবে।
নবমী তে বেশির ভাগ মানুষ আমিষ খান।আবার ঠাকুর দেখতে যাওয়ার তাড়া।যদি চটজলদি রেঁধে ফেলা যায় মাটন এর জিভে জল আনা রেসিপি!
০সহজেই রান্না করা যায়,এমন একটি মাটন এর পদ।।
দই মাটন
কি কি লাগবে
পেঁয়াজ,রসুন,আদা,লঙ্কা,ধনে পাতা একসাথে মিহি করে বাটা।তেজপাতা।পরিমান মত দই।
রান্না
০প্রেসার কুকার এ পরিমান মত জল দিয়ে মাংস সেদ্ধ করতে হবে।
০ করাই তে তেল গরম করে তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে গরম মশলা গুঁড়ো দিন।
০এতে মশলা কষিয়ে নিয়ে সেদ্ধ মাংস,নুন,দই, অল্প আঁচে বসিয়ে রাখুন।
০ঝোল শুকিয়ে এলে,নামিয়ে ধনে পাতাকুচি দিন।
দশমী তে অনেকেই আমিষ খেতে চান না।সেক্ষেত্রে নিরামিষ বিরিয়ানি আমিষের দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারে।আমাদের পাঠক দের জন্য রইল এই রেসিপি।
নিরামিষ বিরিয়ানি।
কি কি লাগবে।
বাসমতি চাল 1 কেজি,পনির টুকরো করে কাটা 500 গ্রাম,বড়ো টুকরো করা আলু,জয়িত্রী, জায়ফল,শা জিরে,শা মরিচ(শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করা) লঙ্কা গুঁড়ো,গোলাপ জল,কেওড়া জল 1 চামচ,মিঠে আতর 4-5 ফোটা,নুন,টকদই 250 গ্রাম,গরমমশলা ফোড়ন এর জন্য।ঘি 250 গ্রাম।
রান্না
০বড় হাঁড়িতে গরমমশলা ও তেজপাতা ফোড়ন দিন।অল্প ভাজা হলে, তাতে আলু দিয়ে বাদামি করে ভেজে নিন।
০পনির টুকরো নুন মাখিয়ে ভেজে নিন।
০ওই তেল এ ঘি দিন।তাতে,জল ঝরানো চাল দিয়ে নাড়তে থাকুন।এতে নুন,লঙ্কা গুঁড়ো দিতে হবে।
০চাল অল্প ভেজে দ্বিগুন জল দিতে হবে।তারপর জল অল্প ফুটলে, তার মধ্যে গুঁড়ো করে রাখা মশলা, আলু,পনির দিয়ে দিন।এবার হাঁড়ির ঢাকনা বন্ধ করে রাখুন।
০জল মরে এলে,হাঁড়ির ঢাকনা খুলে আতর গোলাপজল,কেওড়া জল দিয়ে আবার কিছুক্ষন হাঁড়ির ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে।
০গ্যাস বন্ধ করে, খানিকটা ভাপে রেখে,গরম গরম পরিবেশন করুন।
এবার বিজয়ার পালা।মা ঠাকুমার সময় থেকে বিজয়া তে হাতে বানানো নিমকি,নাড়ুর স্বাদ ই আলাদা। আজ পাঠক দের জন্য হাতে বানানো কিছু বিজয়ার মিষ্টি।
পিরিকিয়া:
উপকরণ:ময়দা 100 গ্রাম,সুজি 1 চামচ, ঘি 2 চামচ, কুকিং সোডা 1 চিমটি,চিনি আধ চা চামচ,নুন সামান্য,জল পরিমাণ মত।
পুরের জন্য: চিনি আধ কাপ,সুজি 1 কাপ,কাজুবাদাম, কিসমিস,ছোট এলাচ,ঘি 1 চামচ।
প্রণালী
০একটা বড় পাত্রে ময়দা ও কুকিং সোডা চেলে নিয়ে তার মধ্যে সুজি আর নুন মেশান।এবার জল দিয়ে মেখে মন্ড বানান।এবার এই মন্ড পলিথিন এ জড়িয়ে আধ ঘন্টা রেখে দিন।
০পুর বানানোর জন্য ,কড়াই তে ঘি দিয়ে সুজি দিন।এবার চিনি,ভাজা সুজি,কাজু, কিশমিশ মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন।
০এবার মন্ড থেকে বড় লুচির মত করে,তাতে পুর দিয়ে সেমি সার্কেল আকারে গড়ে নিন।পুলির মত দু পাশ মুড়ে দিন।
০তারপর তেল এ পিরিকিয়া লাল করে ভেজে নিন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।
সঙ্গে অসাধারণ একটি ক্ষীর আর নারকেলের নাড়ু। যা ছাড়া বিজয়া অসম্পূর্ণ।
ক্ষীর আর নারকেল এর নাড়ু।
উপকরণ
খোয়াক্ষীর 200 গ্রাম।চালের গুঁড়ো 100 গ্রাম।নারকেল কোরা 2 টি।চিনি 400 গ্রাম। ঘি ভাজার জন্য।
প্রণালী
০ চালের গুঁড়োয় সামান্য চিনি,ক্ষীর এত অল্প জল মিশিয়ে মেখে ছোট বল তৈরি করে ঘি এ ভেজে রাখতে হবে।
০নারকেল কোরা আর চিনি পাকে এলে তার মধ্যে ক্ষীর এর বল গুলি দিয়ে নাড়ুর আকারে গড়ে নিতে হবে।
পুজোর রান্না