আলমগীর মাসুদ

নাম শুনে যে কেউ প্রথমে চমকে উঠবে। এ আবার কি নাম? প্রশ্নটি গ্রামের অনেকের মুখে মুখে ফিরছিলো। বদির আলী কানে কম শোনার কারণে গ্রামের মানুষ আস্তে আস্তে তাকে দেন্দা আলী বলে ডাকতে শুরু করলে তা ছড়িয়ে পড়ে নিজ গ্রাম থেকে পাশের গ্রামগুলোতেও। দেশভাগের পর ‘বদির আলী’ নামটিরও পরিবর্তন আসে। অর্থাৎ ‘দেন্দা আলী’ নামে সে বেশ পরিচিতি লাভ করে।

আজ থেকে প্রায় তিপ্পান্ন বছর আগে কুমিল্লা শহরের যুক্তিখোলা থেকে বাবা নোয়াব আলীর ভিটা ছেড়ে বাউরখুমা গ্রামে আশ্রয় নেয়। তখন তার বয়স সাত বছর। অপরিচিত ও মুসলিম হওয়াতে প্রথম প্রথম তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কেননা তখন বাউরখুমা গ্রামটিকে একমাত্র হিন্দুরাই শাসন করত। মুসলিম বলতে হাতে গোনা কয়েকজন। তারমধ্যে বদির আলীই একটু সাহসি ছিলো। তারা এ গ্রামে আসার ক’বছর পর শুরু হলো যুদ্ধের এক সংকেত। রাজ পথ থেকে গ্রামের আদা কাঁচা, পাকা পথের মাঝে দশ বারজন নজোয়ান এক সাথ হয়ে স্লোগান দেয়,

কাঁধে কাঁধ রেখে এগিয়ে চলো পূর্ব বাংলা মুক্ত কর

হাতে হাতে অস্ত্র ধর আমার বাংলা স্বাধীন কর

স্লোগান শুনে বদির আলীও দৌড়ে এসে বলে উঠে

আর নয় শাসন-শোষণ এবার বাঁচবে গরিবগণ…

যখনি যুদ্ধের সংকেত ভেসে আসে, বাউরখুমা গ্রামের কিছু হিন্দু পরিবার আতঙ্কে থাকে। এই বুঝি আসছে, এই বুঝি ধরছে, এই বুঝি মারছে! মনের ভয়ে এক পরিবার দুই পরিবারকরে ভারতের ত্রিপুরার রাজ্যের পথ ধরে। যুদ্ধ যখন শুরু হলো বাউরখুমা গ্রামটিও আস্তে আস্তে খালি হতে থাকলো! সব হিন্দু দল বেধে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করে। এই দিকে বাউরখুমায় মুসলিম সংখ্যা বাড়তে থাকলো। দেশে দেশে যুদ্ধ, মানুষ যার যার মতো করে দূর দূরান্তে পালিয়ে যাচ্ছে। ফসলি ক্ষেত নষ্ট, গরু, ছাগল দৌড়াচ্ছে। কামলাদের মুখে খাওয়ার নেই। বৌ-ঝিরা সুদূর পথে তাকিয়ে আছে। হিন্দুরা রাম রাম ভুলে যায়, নতুন করে কালেমা শিখে। উঠতি বয়সের হিন্দু ছেলেরা ধনের আগা ফুটায়। মেয়েরা মাথায় ঘোমটা দেয়। কিন্তু বদির আলী একটুও বদলায় না। সে মনিকার পিছু পিছু ঘুরা, তার বাড়ির আশপাশে উঁকি দেয়া, বিকাল হলে চুলে সরিষার তেল মেখে মনিকার সংগীতালয়ের আশপাশে আড্ডা দেয়া ছাড়া তার আর কোনো কাজই নেই। মনিকাকে সে একা ভালোবাসতো বলে ভালোবাসার প্রস্তাব রাখার কখনো সাহস পায়নি। মনিকাও যে বুঝতো না এমন নয়, তবে মুখে কিছু বলতো না। মাঝে মাঝে রোমান্টিক দৃষ্টিতে মনিকা তাকালে বদির আলীর ভালো লাগা আরো বেড়ে যেত।

দুই.

দাদুর হাতেই মনিকার নাচ শেখা ও সংগীত সাধনা। প্রতি বছর স্বরস্বতী, লক্ষ্মী, কুমারী, দুর্গাপূজা কি প্রতিমা পূজায় মাতবরের বাড়ির উঠোনে কিংবা মন্দিরের পাশে মঞ্চ সাজিয়ে নাচগানের আসর হয়। আসরে যে যত বেশি নৃত্য ও কীর্তন করবে সে নাকি দেবতাদের খুশি করাতে পারতো। দেবতারা খুশি হয়ে ঐ রাতেই মেয়েদের রূপ ও ভাগ্য নির্ধারণ করতো। সে পূজা প্রার্থনায় একজনের ভক্তির সাথে শক্তিধরও হতো। পূজা এলেই কিছু কিছু লোক যৌন লোভের ললাট বেধে থাকে। গত বছর একজনকে নাচের আসর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছিল কয়েকজন যুবক। পূজা, গান, নাচ, রাত জেগে কীর্তনে মেয়েদের উপস্থিত থাকা, যুবতীর পায়ে ঘুঙুর পরানো সেদিন থেকে নিষেধ করে মোড়ল। উৎসবহীন চলতে থাকে বাউরখুমা গ্রামের মানুষগুলো। আলী বেটা যে যৌবনে পা রেখেছে তা বেশ উপলদ্ধি করে মনিকা। সে দুই কি তিনদিন কাজ করে আর সাপ্তাহের বাকি দিনগুলো মাথায় ফিতা কেটে মনিকার পিছু ব্যস্ত থাকে। আলীর চেহারাটা দেখতে বেশ মায়াবী। কালো বর্ণের হলেও দেহটা অনেক সুন্দর দেখায়। মনিকার ভালোবাসা পেতে তাকে কম কষ্ট করতে হয়নি। রাত জেগে মনিকার বাড়ির সামনে অপেক্ষা করা, সকাল হলে স্কুল পথে দাঁড়িয়ে থাকা, দুপুর হলে মনিকাদের বাড়ির পুকুরটাতে দীর্ঘ সময় নিয়ে স্নান করা। বিকাল হলে নাচ ও সংগীতালয়ের দক্ষিণ পাশের কড়ই গাছটির নিচে বসে থাকা। মনিকার চোখ পড়লে কেমন নীরব হয়ে অন্যদিকে ফিরে যাওয়া। আলীর এসব দেখতে দেখতে মনিকার কচি মন কখন জাগ্রত হয় তা ঠিক মনে করতে পারে না। আর মনে করবেই বা কেমন করে, ভালোবাসা তো আর জানান দিয়ে আসে না।

পূজা এলেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে গ্রামের কিছু যুবক। তারা একেক সময় সন্ধ্যা কি রাতে জড়ো হয়ে বলে, বারমাস হারই একটা উসসব আইয়ে, হেই উসসবটাও মোড়লবেটা বন্ধ ঘোষণা কইচ্ছে, আঁরা কি ক’নো আনন্দ হুজা কইরত্যা? হারা বছর হাতরে কাম করি হানজিন্না লুঙ্গির হার ধরে বিড়ি টাইনতে টাইনতে রাইচ্ছা ঘুমাই। বিয়াইন্না অইলে আবার কামে দৌড় এইডা কি আমরার জীবন? ভগবানে আমরারে মানুষ কইরা পাঠাইছে, অথচ এই গ্রামে কোন আনন্দই নাই! আইজকা যামু মোড়ল বেডার দরবারে। কমু, এখনেত্তুন এই গ্রামে হুজা উসসব করন লাইগবো।

গ্রামের কয়েকজন যুবক একসঙ্গে মোড়ল সাহেবের বাড়ি যায়। মোড়ল সাহেব দুই তিনজনের কাছ থেকে কিছু অভিযোগ শোনার পর বললো, ঠিক আছে অনুমতি দিলাম, বলে ফের চোখ দুটি যুবকদের দিকে ঘুরিয়ে একটা শর্ত দেয়, এবারের উৎসবে তোমরা পূজা মূর্ছনা কর। তবে কোনো মেয়ে মানুষকে উৎসবরাতে নাচাতে পারবে না। আমি চাই না, আমার এ গ্রামে আর কোনো বদনাম হোক। তোমরা উৎসব কর আর যাই কর সবাই যার যার চরিত্র বজায় রাখবে। এবং বাহিরের উৎসবমুখি মানুষদের সম্মান ও মেয়েদের ভদ্রতা দেখাবে। মোড়লের যুক্তিযোক্ত কথা শুনে সবাই হাসিমুখে মোড়লের প্রতি সম্মান জানিয়ে, আদাব-নমস্কার দিতে দিতে পথ ধরে।

পাড়ার কাছাকাছি আসলে, যুবকদের মধ্যে কথা তোলে সাভলু।

‘বাহ অনেকদিন পর মোড়লবেটা ভালা একখান কথা কইছে। চল চতইন্না’র দোকানে চা খামু..’

‘এই বেটা থাম, মড়ল ভালা কতা কয় কেমনে? এইডা তার ভালা সাজার চেহারা।’

‘অইছে অইছে, ইয়ানে থিয়াই থিয়াই আর চিল্লাইছ না। অন চল উসসবের হুকুম দিছে সাথে যা কইছে তা মানি চলন লাইগবো। তা ছাড়া মোড়লবেটা তো আর খারাপ কিচ্ছু ক’নো?’

‘অই সাভলুইয়া, মোড়লবেটার চামচামি করিস না, মোড়লবেটা কনটা ভালা আর কনটা খারাপ কয় তা আমরা ভালা কইরা জানি। চল, এই বিশুদবারের হরের বিশুদবারে হুজা, অনেত্তুন টেয়া উডন লাইগবো।’

এ ক’জনের প্রতিবাদে পুরো গ্রামের মানুষ নতুন উৎসবের চেহারায় জেগে উঠে। ছোট ছোট ছেলেরা পায়ের সাথে পা লেঙরা করে নাচতে শুরু করে। মেয়েরা বায়না ধরে পূজার কেনা কাটায়। লক্ষণ, মুইজ্যা, আবু, শংকর, সিদু, হরিমুলেরা তো সারা বছর পাড়ায় পাড়ায় ঘোরাফেরা আর যুবতী মেয়েদের পাছার দিকে তাকিয়ে শিষ দেয়াটাই তাদের এগারো মাসের কাজ। বাকি একমাস পূজাকে ঘিরে পূজার নাম করে দোকানে দোকানে চাঁদা কালেকশন, পরে ওই টাকায় গরম মদ, বিয়ার, হুইসকি, গাঁজা খাওয়াটাই উৎসবে তাদের প্রধান কাজ হয়ে উঠে।

তিন.

মনিকা বুঝে গেছে যেখানে বিশ্ব সংসারে জনসংখ্যা সাগরে নিমজ্জিত আর অসত লোকের ভরপুর, এমন চিন্তায় মনিকার অন্তর প্রতিহিংসায় দাপনলে পরিব্যপ্ত। শুধু যে চিন্তা তা নয়, একদিন পুকুরে স্নান করার সময় দুই যুবক তাকে লক্ষ্য করে শিষ দেয়। তীক্ষ চোখে মনিকা প্রতিবাদ করতে চাইলে, উল্টো জিব দিয়ে যুবক দুটো অশ্লীল চুম্বকদান শেখায় তাকে। মুহূর্তে উত্তেজিত হয়ে অর্ধেক স্নান করে মনিকা পুকুর ঘাট ত্যাগ করে। স্কুল পথেও ঐ দুশ্চরিত্রদের সামনে আটকা পড়ে। দুই কানে তাকে শুনতে হয়েছে আপত্তিকর কথা। মনিকা আগেই প্রতিবাদ করেছিলো। পূজার আসর থেকে যখন কোনো সুন্দরী যুবতীকে তুলে নিয়ে প্রেম প্রস্তাব করে যুবতী রাজি না হলে তাকে জোর করে ধর্ষণ করা, এই অপকর্মের প্রতিশোধ গ্রহণের অণ¦ষণে স্বয়ং মাতবরের ঘরে উপস্থিত। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মাতবর বলো আর ধর্ষক বলো, আমাদের সমাজে দু-দলের চরিত্রই তো এক! কালে কালে চিৎকারে চিৎকারে যখন যুবতীরা ধর্ষিত হয়Ñ তখনি মন্দিরের ভেতর থেকে ভেসে আসে, ঈশ্বর তাকিয়ে থাকেন বলে মানব আত্মার দর্শনলাভ। ঈশ্বর মহান, ঈশ্বর পরমত্মা। ঈশ্বরই তো সর্বশক্তিমান। আবার ঈশ্বরই দেখেন যুবতী কন্যার ধর্ষণ! বিস্মিত সুরে পুরোহিত দ্বিতীয়বার বলে উঠে, জীবতকালে মানুষ অকালে মরে অকালে হারায়! অকালে যে শূন্য হয়ে পথের বাহির হয়, অকালে আবার সব হারিয়ে, ঈশ্বর প্রতিদ্বন্দ্বী মানুষই সাধক হইয়া যায়।

এরই মধ্যে আলীর সঙ্গে মনিকার সম্পর্ক বেশ মধুময় হয়ে উঠেছে। তার হাত ধরে সে পালাতেও চায়। গ্রামের অসত লোকদের সাথে না থাকাটাই যে ঢের ভালো। সে দেখেছে এখানে থাকলে নষ্ট জীবন উপাধী ছাড়া কপালে ভালো কিছু জুটবে না। এক তো দেশ দখলের লড়াই তার উপর দাদু ও কাকা তাকে দিয়ে যে ব্যবসা করাতে চায়, যেমন ছোট বেলায় মনিকা দেখেছে তাদের বাড়িতে পরমানুষ আসতো। সেসব লোকগুলোদের সাথে তার দাদু কান্তা রায়ের বেশ সখ্য ছিলো। ভাবতে ভাবতে মনিকা আরো দ্রুত হাঁটে, সঙ্গে আলী। দেহ জুড়ে দুজনের ঘাম যেন বেড়েই চলে। অনেক পথ দৌড়ে এসে কাঁচা জমিনের উপর পা রাখে। আলী বলে, ঐ তো দেখা যাচ্ছে হার, তারপরেই তো ত্রিপুরা। তুমি আরকদ্দুর হাঁট, দেখবা আমগোরে আর কেউ দেখবে না।

আলীর কন্ঠ শুনে মনিকা তাকায়, সবাই তো জীবন নিয়া দৌড়াইতেছে। কেউ জায়গা দখল করছে, কেউ পাক বাহিনীর চামচামি করে হিন্দুদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। মনিকার কাকা হরিমোহন। সে একের পর এক বিড়ি ফুঁকে। ধুতির পাড় ধরে এদিক ওদিক তাকায় আর মনিকার নাম ধরে লম্বা লম্বা হাক দেয়। শিশু, বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সীদের সাথে কপালে সিঁদুর দেয়া নতুন বিবাহিত নারীরাও দ্রুত পালাচ্ছে মুহুরীর চর ঘেঁষে। সবার মনে একটি ভয়। রাজাকার পাহারা দিচ্ছে, পাকবাহিনীরা আসছে। আলী ও মনিকা ততক্ষণে সীমানা পাড় হয়ে ভিতরে চলে গেছে। হরিমোহনের চেহারা উত্তেজিত দেখে আবুল মাঝি প্রশ্ন করে, কারে ডাকস মোহন? হরিমোহন হাক ছেড়ে উত্তর দেয়, হ কাকু ডাক দিই, তয় তোয়ার হুনা কাম কি? তুমি নৌকা চালাও। আবুল মাঝি অসুন্তোষ হয়। মনে মনে বলে, হালার মোহইন্না তোর ঘাড় ত্যারামি এই বয়সেও গেলো না, ডাক, গলা হাডাই ডাক।

মুহুরীঘাট পাড় হলে হরিমোহন চেঁচায়, মাগিরহুত আইল্লা, যদি তোরে পাই, মা কালীর দিব্যি, খাদাইলামু। জেল হোক আর ফাঁসি হোক, তুই কনে যাস আঁই ছামু। নদী পাড়াপাড় হওয়া অনেকে তাকায় মোহনের দিকে। কেউ কেউ বলে, মোহইন্না কি পাগল হয়গেছেনে? হেতে, হতে হতে এতো ছিল্লায় কা?

১৮৯২ সালে মুহুরী গাঙের পুবপাশের একটি কুম থেকে ‘বাউরখুমা’ নামকরণ হয়। চারদিক সুন্দর প্রাকৃতিকময় জলাভূমি, গাছ গাছালী ঘনছায়া পাহাড় ও ফসলিক্ষেত। ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী রেল সংযোগ কেটে এখন নতুন স্থলবন্দরে রুপান্তরিত। প্রাচীন ও নব শিক্ষা সাহিত্য এবং সংস্কৃতি সমৃদ্ধ এই বাউরখুমা গ্রামে সকল জাতের বসবাস থাকলেও একাত্তর স্বাধীনতা সংগ্রামের পর দুই একজন হিন্দু পরিবার ছাড়া সবাই পালিয়ে গেছে পাক বাহিনীর ভয়ে!

কালিকাপুর রাস্তার পাশে কাটাবাঁশের একটি বড় মুড়া সাথে পুরনো তুলা গাছটির মাঝখানে হরিমোহন গামছা বিছায়। ক্লান্ত শরীরে গলার আওয়াজ পরিস্কার আসে না। তবুও সুর মিলায়।

ঘুরছি ঘুরছি একা একা ঘুরছি কিনার পথ

শূন্য দেহ শ্মশান ঘাটে একলা পড়ে রয়

মানুষ একলা পড়ে রয়।

বিকেল নয় সন্ধ্যা হলে কূলবধুরা আরতির উলুধ্বনি দেয়। গান থামায় হরিমোহন। মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ শুনে কয়েকটি কুকুর নিজস্ব ভঙ্গিমায় আজানের শব্দে সুর মিলায়। হরিমোহন ঘাড় ফিরে তাকায়। চিতে-পড়া কুঁচকানো পাঞ্জাবি পড়ে এক বৃদ্ধ কুকুরগুলোকে চেঁচালে, হরিমোহন হাসে। বিকট শব্দের সে হাসি থামে না যেনো।