সুব্রত বসু

আমি অতনু, জানেন আমি একজন গে। এই কথাটা আমাদের গোষ্ঠীর মধ্যে ছাড়া প্রকাশ করা চলে না। তবু বললাম এর একটা কারণ আছে। কিছু দিন হল আমার নিজেরই ভূতের অত্যাচারে আমি জেরবার।সর্বদাই শিউরে শিউরে উঠছি।সন্দেহ দেখা দিয়েছে আমি কি সত্যিই বেঁচে আছি?  আমরা মানে এই  সমকামীরা খুব একাকীত্বে ভুগি। তারই মধ্যেই আমাদের  সঙ্গী জুটিয়ে নিতে হয়,চোখের দৃষ্টি দেখে আমরা বুঝতে পারি। এই নজরের ওপর আমাদের খুব আত্মবিশ্বাস। ইদানীং মনসিজের সঙ্গ আর ভাল লাগছিল না, বড্ড একঘেয়ে মনে হচ্ছিল। সেদিন দুপুরে যখন মনসিজ এলো, খুব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া করলাম, অপমানও করলাম যা তা বলে অবশ্য আমাদের এই পারস্পরিক অপমানটা খুব  গায়ে লাগে না। মনসিজ সেইরকমই ভাবেই চলে গেল। মনসিজের সঙ্গে ইচ্ছাকৃত এই ব্যবহারের কারণ ইদানীং আমার  নজরে পড়ছিল এক  রিসার্চ স্কলারের দিকে। তারও নাম অতনু। ইনভারসিটির অধ্যপক  বিনায়ক ব্যানার্জী ওর গাইড। দুপুরের দিকে প্রায়ই আসে। আমারও ফাইন্যাল ইয়ার চলছে, চোখাচোখি হতেই  দৃষ্টিতে গোপন আহ্ববান চিনতে ভুল হয়না আমাদের। হেসে আলাপ করলাম, পড়াশুনায় আমি খুব হেলাফেলার নই। আগে থেকেই জেনেছিলাম সাবজেক্টটা। ইন্টারেস্ট দেখালাম, ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে চা টোস্ট  খেতে খেতে অনেকক্ষণ গল্প করলাম।যত সময় যেতে লাগল আত্মবিশ্বাস বাড়ছে আমার, মনে হচ্ছে না যে আমি  ভুল করছি। তবে তাড়াহুড়ো করলে চলেবে না। বেশ কয়েকদিন পর ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম। এ্যাকসেপ্টও  করল। চ্যাটে আলাপ চলল বেশ কিছুদিন। ফোন নাম্বার নিলাম হোয়াটস এ্যাপে এ্যাড করার জন্যে। এখন নেহাত বড়রকমের প্রয়োজন  নাহলে কেউ কাউকে ফোন করে না। চ্যাটের মাধ্যমেই সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যায়। রোজই এক আধবার সামান্য আলাপচারিতা চলে  কথাবার্তায় আমার বিশ্বাসের সপক্ষেই ইঙ্গিত পাচ্ছিলাম। কি জানি মনে হল আর দেরী করা ঠিক হবে না তাই একদিন সরাসরি হোয়াটস্‌ এ্যাপে  প্রস্তাব দিয়ে ফেললাম। ভাবতে পারিনি এটা ঘটবে, নিজের ওপর অগাধ আত্মবিশ্বাস ছিল তবুও  প্রত্যাখ্যাত হলাম রূঢ় ভাবে।  খানিকটা থুথুর ছবি পোস্ট করল।  মাথাটা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠেছিল সেদিন।  

 এরপর সেদিন ইউনিভারসিটির সামনে আমারই সহপাঠী  সুজয়াকে মোটরবাইকে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে উলটো দিকে মুখ করে শব্দ করে  থুথু ফেলল। এতদিনের আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে গেল।

সেদিনই মেট্রোরেলে সুইসাইড এ্যাটেমপ্ট করি। সিকিউরিটির লোক ধরে ফেলে, ঠাস করে  একটা চড় মারে। সেই থেকে বাড়ীতে, চিকিৎসা চলছে। ফেসবুকে ও আমাকে ব্লক করে দিয়েছে,ছবিটাও আর দেখতে পাচ্ছি না।ভাবতেই পারছি না কি করে এত বড় ভুল হল। তবে কি ও বাইসেক্সচুয়াল? তারপর থেকে কিছুই ভাল লাগছে না আমার,মাথার ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেছে।    

সেদিন মনসিজ এসেছিল,  আমার যে  ভুল হয়নি সেকথা বলতে।  দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছি। ওকে আর আমি সহ্য করতে পারছি না।আমার যে কি হবে পরিষ্কার বুঝতে পারছি। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যাচ্ছি বটে  তবে  চিকিৎসায় কোন উপকার হচ্ছে বলে মনে হয় না। কারণ ওই ঘটনার পর থেকেই আমার  নিজের  ভূতকে সবসময় দেখতে পাচ্ছি। ওই দেখুন পাখায় একটা দড়ি বেঁধে দিচ্ছে।না, আর দেরী নয় ওকে সাহায্য করি। ওর সঙ্গে আমাকে এক হতেই হবে। দুজন অতনু কিন্তু  থাকতে পারে না একসাথে।